ডিজিটাল মার্কেটিং কি? কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং করবেন?

ডিজিটাল যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ব্যবসা করার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজকাল মানুষ ইন্টারনেট এর মাধ্যমে ঘরে বসে তাদের প্রয়োজনীয় ডিজিটাল প্রোডাক্ট কেনার পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করার ক্ষেত্রেও ইন্টারনেটের হেল্প নিচ্ছে। কাজেই আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রতি ফোকাস না করে এখনো আগেকার পুরনো মানুষের মত ট্রাডিশনাল মার্কেটিং নিয়ে পড়ে থাকলে, আপনি অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগিতায় ঠিকে থাকতে পারবেন না।
ডিজিটাল মার্কেটিং কি? কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং করবেন?




আপনি একজন বিজনেসম্যান হয়ে থাকলে আপনাকে অবশ্যই ডিজিটাল মার্কেটিং করতে হবে। কারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতেকরে প্রোডাক্ট সম্পর্কে মানুষকে সহজে জানিয়ে দেওয়ার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং এর চাইতে সহজ কোন মার্কেটিং ব্যবস্থা বর্তমানে নেই। সঠিকভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং করতে পারলে, ঘরে বসে খুব অল্প দিনে যেকোন কোম্পানির প্রোডাক্ট মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া সম্ভব হবে।




অনলাইনে ক্রয় করার গেটওয়ে কম থাকার কারনে এখনো আমাদের দেশে ডিজিটাল মার্কেটিং খুব বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। তবে যে হারে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে পরিষ্কারভাবে আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে, খুব শীঘ্রই আমাদের দেশেও ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবস্থা মার্কেটিং এর বড় একটি জায়গা দখল করে নিবে।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর ফলে এক দিকে মানুষ যেমন ইন্টারনেট এর মাধ্যমে ঘরে বসে প্রোডাক্ট কিনতে পারছে, অন্যদিকে ব্যবসায়িরা তাদের পন্য কম খরছে মানুষের কাছে পৌছে দিয়ে সেগুলো বিক্রির মাধ্যমে ব্যবসায় সফল হয়ে উঠছে। সেই সাথে ডিজিটাল মার্কেটাররা তাদের মেধাকে কাজে লাগে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ করে ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার এর মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করে নিচ্ছে।
বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে আপনার ধারনা থাকলে, আপনি যেকোন কোম্পানিতে ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে কাজ করে একটি স্মার্ট এমাউন্ট ইনকাম করে নিতে পারবেন। আমাদের দেশে অসংখ্য ডিজিটাল মার্কেটার রয়েছে, যারা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করে প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা আয় করছে।

তাছাড়া আপনি যদি বর্তমানে কোন কোম্পানির মার্কেটিং সেক্টরে কাজ করে থাকেন, তাহলেও আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং এর নিয়ম জেনে নিতে পারেন। মার্কেটিং সেক্টরে কাজ করার পাশাপাশি আপনার কোম্পানিতে ডিজিটাল মার্কেটিং করতে পারলে, কোম্পানির কাছে আপনার ভ্যালু অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়ে যাবে।

ডিজিটাল মার্কেটিং কি?

সাধারণত কোন পণ্য বা প্রোডাক্ট এর বিজ্ঞাপন দিয়ে অথবা যেকোন উপায়ে প্রোডাক্ট এর ভালো দিক তুলে ধরে সেগুলো মানুষের কাছে বিক্রি করাকে মার্কেটিং বলে। অর্থাৎ যেকোন উপায়ে প্রোডাক্ট মানুষের কাছে বিক্রি করার জন্য মার্কেটিং করা হয়।

ঠিক একইভাবে ইন্টারনেট, ডিজিটাল মিডিয়া ও ডিজিটাল টেকনোলজি ব্যবহার করে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে কোন প্রোডাক্ট বা পণ্য মানুষের কাছে পৌছে দিয়ে সেগুলো বিক্রি করার কৌশলকে ডিজিটাল মার্কেটিং বলা হয়। মূলত ইন্টারনেট ও ডিজিটাল টেকলোজি ব্যবহার করে মার্কেটিং এর যে সমস্ত কাজ পরিচালনা করা হয়, তাকে ডিজিটাল মার্কেটিং বলে।

ডিজিটাল মার্কেটিং কেন করবেন?

যারা মার্কেটিং প্রসেস বুঝতে পারেন, তারা সহজে ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছেন। মার্কেটিং এর প্রধান কাজ হচ্ছে, কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্ট মানুষের কাছে পৌছানো। যত সহজে বেশি মানুষের কাছে প্রোডাক্ট এর বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে মানুষ প্রোডাক্ট কেনার জন্য উৎসাহিত হবে এবং আপনার প্রোডাক্ট তত বেশি সেল হবে।

মার্কেটিং এর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রোডাক্ট এর প্রচারের মাধ্যমে কাস্টোমারদের প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে আপনি একজন দক্ষ মার্কেটার হয়ে থাকলে আপনার করণীয় হবে, কত সহজে কাস্টোমার পাওয়া যায়, সেই পথ বের করে নেওয়া। যেই জায়গাতে বেশি সংখ্যক মানুষ বেশি সময় অবস্থান করে, সেই জায়গাতে পন্যের বিজ্ঞাপন বা মার্কেটিং করাই হচ্ছে একজন সফল মার্কেটার এর কাজ। 
ট্রাডিশনাল মার্কেটিং ও ডিজিটাল মার্কেটিং এর মধ্যে পার্থক্য কি?
এক সময় ছিল যখন মানুষ তার পন্যের প্রচার করার জন্য ফেরিওয়ালা দিয়ে বাড়ি বাড়ি পন্য পাঠাত, কিন্তু কালক্রমে আজ সেই ধরনের পদ্ধতি পুরনো হয়ে যাওয়ার কারনে সেই পদ্ধতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তারপর মানুষ বিভিন্ন রেডিও, টেলিভিশন, ম্যাগাজিন ও সংবাপত্রের মাধ্যমে ট্রাডিশনাল বিজ্ঞাপন দিতে থাকে। কারণ মার্কেটাররা তখন বুঝতে পারে মানুষ তাদের অধিকাংশ সময় রেডিও, টেলিভিশন ও সংবাদপত্র পড়ে ব্যয় করে। কাজেই রেডিও এবং টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দিলে সহজে পন্য সাধারণ মানুষ পর্যন্ত পৌছানো যাবে।

কালক্রমে যখন ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়া আবিষ্কার হলো তখন মানুষ ফেসবুক ও ইন্টারনেটে আরো বেশি সময় ব্যয় করতে থাকে। তখন সব ধরনের কোম্পানি ও মার্কেটাররা বুঝতে পারে যে, ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়াতে ডিজিটাল মার্কেটিং করলে আরো সহজে অল্প সময়ে যেকোন প্রোডাক্ট মানুষের কাছে পৌছানো সম্ভব হবে। আর সেই থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবস্থা জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে।

ডিজিটাল মার্কেটিং অন্যান্য মার্কেটিং এর চাইতে কম খরছে দ্রুতার সাথে করা যায় বিধায় বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষকরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়িরা অল্প খরছে ডিজিটাল মার্কেটিং করার সুযোগ পায় বিধায় ডিজিটাল মার্কেটিং এর জনপ্রিয় তুমুল হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

আপনি সাধারণ সেন্সে চিন্তা করে দেখুন, একটি নিউজ পেপারের ফ্রন্ট পেজে ছোট্ট করে একটি বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য একটি কোম্পানিকে প্রায় লাখ টাকা’র অধিক ব্যয় করতে হয়। যেটা কোন ছোট খাটো কোম্পানির পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়া কোন টিলিভিশনে একটি বিজ্ঞাপন দিতে গেলেই ৫-১০ লক্ষ টাকা খরছ করতে হয়। কারণ টেলিভিশন বিজ্ঞাপন তৈরি করা থেকে শুরু করে টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দেওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় ৫/৭ লক্ষ টাকা খরছ হয়ে যায়। আর কোন নায়ক/নায়িকা বা সেলিব্রেটিকে দিয়ে টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দিতে হলে শুধু মডেলকে ১৫/২০ লক্ষ টাকা দিতে হয়। যে খরছ একটি ছোট কোম্পানির পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।

কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটে মাত্র ৫ ডলার থেকে শুরু করে কোটি টাকা খরছ করে পছন্দমত বাজেটে বিজ্ঞাপ বা মার্কেটিং করা যায়। তাছাড়া ডিজিটাল মার্কেটিং এর সবচাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে ঘরে বসে মার্কেটিং এর কাজ করা যায় এবং নির্দিষ্ট কাস্টোমার ও নির্দিষ্ট এলাকা টার্গেট করে বিজ্ঞপন দেওয়া যায় বিধায় কম খরছে টার্গেট করা কাস্টোমারদের কাছে পন্য মার্কেটিং করা সম্ভব হয়, যেটি অন্য কোন মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর সুবিধা কি?

  • কম খরছে ছোট বড় সকল কোম্পানি ডিজিটাল মার্কেটিং করতে পারে।
  • অল্প সময়ে প্রোডাক্ট এর বিজ্ঞাপন কাস্টোমারদের কাছে পৌছানো সম্ভব হয়।
  • ঘরে বসে কম্পিউটার দিয়ে মার্কেটিং করা যায় বিধায় কারো কাছে যেতে হয় না।
  • ইন্টারনেটে কোম্পানির ব্রান্ড তৈরি করা যায়, যেটা অন্যকোন উপায়ে সহজে করা যায় না।
  • এলাকা ভিত্তিক বিভিন্ন বয়সের কাস্টোমার টার্গেট করে মার্কেটিং করা সম্ভব হয়।
  • ওয়েবসাইটের প্রচারের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং সবচাইতে সহজ ‍উপায়।
  • ঘরে বসে অনলাইনে প্রোডাক্ট এর অর্ডার পাওয়া যায় বিধায় সহজে পণ্য বিক্রি করা সম্ভব হয়।
  • কাস্টোমারদে সাথে অনলাইনে কমিউনিটি তৈরি করা যায়।
সারা বিশ্বে এখন কম্পিউটার ও ইন্টারনেট এর ব্যবহার বাড়ছে। যত দিন যাবে মানুষ আরো বেশি কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহার করবে। কাজেই যত দিন যাবে ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব ও চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। সে জন্য ভবিষ্যত পরিকল্পনা মাথায় রেখে একজন সফল মার্কেটার হওয়ার জন্য অবশ্যই ডিজিটাল মার্কেটিং এর দিকে মনোযোগি হতে হবে।

ট্রাডিশনাল মার্কেটিং ও ডিজিটাল মার্কেটিং এর মধ্যে পার্থক্য কি?

এখনকার টেকনোলজির যুগে কেন আপনি ট্রাডিশনাল মার্কেটিং বাদ দিয়ে ডিজিটাল মার্কেটিংকে বেশি গুরুত্ব দেবেন, সেটি জানার জন্য ট্রাডিশনাল মার্কেটিং এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর পার্থক্য জেনে নিতে হবে। ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং ও ডিজিটাল মার্কেটিং এর মধ্যে যে সব পার্থক্য রয়েছে -
  • ট্রাডিশনাল মার্কেটিং করার জন্য বেশি পরিমানে টাকার প্রয়োজন হয়। কিন্তু খুব কম খরছে ডিজিটাল মার্কেটিং করা যায়।
  • ট্রাডিশনাল মার্কেটিং এর তুলনায় ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে দ্রুত পন্যের প্রচার করা যায়।
  • ট্রাডিশনাল মার্কেটিং মার্কেটে নির্দিষ্ট কাস্টোমার টার্গেট করে বিজ্ঞাপন দেওয়া যায় না। কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটে বায়ারদের সরাসরি টার্গেট করে বিজ্ঞাপন দেওয়া সম্ভব হয়।
  • বেশি খরছের কারনে ছোট খাটো কোম্পানি ট্রাডিশনাল মার্কেটিং করতে পারে না। 
  • ডিজিটাল মার্কেটিং একটি সময় উপযোগি মার্কেটিং ব্যবস্থা।

কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং করবেন?

ডিজিটাল মার্কেটিং এর অনেকগুলো প্লাটফর্ম রয়েছে। আপনার কোম্পানির ধরণ, কোম্পানির প্রোডাক্ট ও ব্যবসার পরিধি এর বিষয়টি বিবেচনা করে আপনাকে সঠিক প্লাটফর্মটি বেছে নিতে হবে। আমরা আজকের পোস্টে বর্তমান সময়ের আটটি জনপ্রিয় ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে আলোচনা করব।
  1. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
  2. গুগল এডওয়ার্ডস
  3. ইউটিউব মার্কেটিং
  4. কনটেন্ট রাইটিং
  5. সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও)
  6. ইমেইল মার্কেটিং
  7. এফিলিয়েট মার্কেটিং
  8. মোবাইল এপস মার্কেটিং
ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে এই আটটি প্লাটফর্ম বর্তমানে সবচাইতে জনপ্রিয়। এ ছাড়া আরো অনেক ধরনের ডিজিটাল মার্কেটিং রয়েছে। তবে আজকের পোস্টে সবগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা না করে শুধুমাত্র এই আটটি ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জেনে নিব।

১। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং

ডিজিটাল মার্কেটিং এর সবচাইতে বড় মার্কেটপ্লেস হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং। পুরো বিশ্বের প্রায় অর্ধেকের বেশি মানুষ এখন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে। আমাদের দেশের প্রায় ৪ কোটি মানুষ শুধুমাত্র ফেসবুক সোশ্যাল মিডিয়াতে কানেকটেড রয়েছে। সেই জন্য আমাদের দেশে বর্তমানে ফেসবুক মার্কেটিং সবচাইতে জনপ্রিয়।

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর ভীতরে আবার অনেকগুলো প্লাটফর্ম রয়েছে। যেমন- ফেসবুক মার্কেটিং, টুইটার মার্কেটিং, ইনস্ট্রাগ্রাম মার্কেটিং, লিংকডিএন মার্কেটিং, পিনটারেস্ট মার্কেটিং ও স্নাপচ্যাট মার্কেটিং ইত্যাদি সহ আরো কিছু সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং রয়েছে। মূলত এই সবগুলো প্লাটফর্ম সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে মানুষ ব্যবহার করে বিধায় মার্কেটিং ক্ষেত্রে এগুলোকে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বলা হয়।

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং আবার দুই ধরনের রয়েছে। যেমন-
  • ফ্রি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং।
  • পেইড সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বা টাকার বিনিময়ে বিজ্ঞাপন।
ফ্রি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের সাইটে কোম্পানির নামে একটি পেজ তৈরি করে সেগুলোতে প্রোডাক্ট শেয়ার করার মাধ্যমে ফ্রি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করা হয়। সেই সাথে বিভিন্ন ধরনের গ্রুপ তৈরি করে এবং বিভিন্ন গ্রুপে জয়েন করে ফ্রি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করা যায়।

পেইড মার্কেটিং আবার দুই ধরনের রয়েছে। একটি হচ্ছে বিভিন্ন বড় বড় সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটারদের সাথে কন্টাকের মাধ্যমে মার্কেটিং করা এবং অন্যটি হচ্ছে সরাসরি সোশ্যাল মিডিয়াতে ডলার পে করার মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করা। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে ফ্রি এবং পেইড উভয় মার্কেটিং বেশ জনপ্রিয়।

২। গুগল এডওয়ার্ডস

গুগল এডওয়ার্ডস হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় একটি ডিজিটাল মার্কেটিং প্লাটফর্ম। আপনি বিভিন্ন ব্লগে এবং ওয়েবসাইটে যে সমস্ত বিজ্ঞাপন দেখতে পান সেগুলোর অধিকাংশ হচ্ছে গুগল এডওয়ার্ডস এর বিজ্ঞাপন। সাধারণত গুগল এডওয়ার্ডস এর মাধ্যমে গুগলকে টাকা পরিশোধ করে এ ধরনের বিজ্ঞাপন বা মার্কেটিং করা হয়। যেকোন কিওয়ার্ডকে টার্গেট করে বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রে গুগল এডওয়ার্ডস হচ্ছে সবচাইতে জনপ্রিয়।

সাধারণত এ ধরনের ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিজ্ঞাপন ওয়েবসাইট/ব্লগের পোস্টের ভীতরে, ডানে, বামে, পোস্টের নিচে, ব্লগের হেডার ও ইউটিউব ভিডিওতে শো হয়ে থাকে। এ ধরনের মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন এর ভিউ ও ক্লিক হিসেব করে গুগলকে টাকা পরিশোধ করতে হয়।

৩। ইউটিউব মার্কেটিং

ডিজিটাল মার্কেটিং ক্ষেত্রে ইউটিউব এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ বিনোদনের জন্য মানুষ এখন টেলিভিশন এর চাইতে ইউটিউবে বেশি ভিডিও দেখে থাকে। বিশেষকরে ইউটিউবে প্রায় সকল ধরনের ভিডিও পাওয়া যায় বিধায় ইউটিউবে ভিডিও দেখতে সবাই স্বাচ্ছন্দবোধ করে। যার জন্য বিভিন্ন কোম্পানি এখন তাদের প্রোডাক্ট বিপণন ও প্রচারের জন্য ইউটিউবকে কাজে লাগাচ্ছে।

ইউটিউ মার্কেটিয়ে আবার দুই ধরনের প্রসেস রয়েছে। একটি হচ্ছে বিভিন্ন জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেলের সাথে কন্টাকের মাধ্যমে পন্যের রিভিউ ও স্পনসরড ভিডিও তৈরি করা এবং অন্যটি হচ্ছে গুগল এডওয়ার্ডস এর মাধ্যমে সরাসরি ইউটিউবে বিজ্ঞাপন দেওয়া। সাধারণত ভিডিও টাইপের বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রে ইউটিউব মার্কেটিং বেশি করা হয়।

৪। কনটেন্ট রাইটিং

প্রত্যেকটি কোম্পানি এখন তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ তৈরি করতে পছন্দ করে। কারণ কোম্পানির নামে একটি ব্লগ তৈরি করে সেটিকে জনপ্রিয় করে তোলা গেলে ব্লগে কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট এর রিভিউ লিখে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সহজে প্রোডাক্ট কাস্টোমারদের কাছে পৌছানো যায়।

আপনি যখন কোন একটি ডিজিটাল প্রোডাক্ট কিনতে চান, তখন প্রোডাক্ট কেনার আগে সেটি আপনার লোকাল মার্কেটে কি পরিমান দামে পাওয়া যাবে, সেটা জেনে নেওয়ার চেষ্টা করেন। বিশেষকরে কম্পিউটার ও ল্যাপটপ কেনার ক্ষেত্রে এখন সবাই ইন্টারনেট থেকে ল্যাপটপ এর বিভিন্ন বিষয় জেনে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রে আপনার ওয়েবসাইটের প্রোডাক্ট পছন্দ হলে কাস্টোমার আপনার কোম্পানির প্রোডাক্ট কেনার জন্য অবশ্যই যোগাযোগ করবে।

৫। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও)

একটি ওয়েবসাইটে ট্রাফিক বা ভিজিটর বৃদ্ধি করে নেওয়ার জন্য সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) করতে হয়। ডিজিটাল মার্কেটে এসইও এক্সপার্টদের বেশ ডিমান্ড রয়েছে। কারণ কেবলমাত্র একজন এসইও এক্সপার্ট আপনার ওয়েবসাইটের প্রোডাক্টগুলো গুগল সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌছে দিতে পারবে।

আপনার ওয়েবসাইটের প্রোডাক্ট গুগল সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌছানোর জন্য অবশ্যই আপনার ওয়েবসাইটটিতে প্রোপার এসইও করতে হবে। কারণ একজন মানুষ কোন ওয়েবসাইটের এড্রেস টাইপ করে গুগলে কোন প্রোডাক্ট খোজে না।

একজন মানুষ যখন কোন প্রোডাক্ট এর প্রয়োজন মনে করে, তখন সেই প্রোডাক্ট এর নাম লিখে সরাসরি গুগলে সার্চ করে। এ ক্ষেত্রে প্রোডাক্ট এর নাম লিখে সার্চ করে আপনার প্রোডাক্ট এর লিংক গুগল সার্চ রেজাল্টের সবার উপরে পাওয়া গেলে ভিজিটর আপনার প্রোডাক্ট কেনার জন্য আগ্রহ দেখাবে। কাজেই ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) এর অনেক গুরুত্ব রয়েছে।

৬। ইমেইল মার্কেটিং

ইমেইল মার্কেটিং হচ্ছে একটি অনলাইন মার্কেটিং পদ্ধতি যার মাধ্যমে আপনার পন্যের এবং সেবার প্রচার করতে পারবেন। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ছোট বড় অসংখ্য প্রতিষ্ঠান এই পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের আয় বৃদ্ধি করছে। ইমেইল মার্কেটিং হল আপনার ক্রেতাদের কাছে আপনার পণ্যের তথ্য পৌছানোর সবচাইতে কার্যকরী পদ্ধতি।

ইমেইল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে আপনাকে ভিন্ন ভিন্ন বয়সের কিংবা বিভিন্ন ক্যাটাগরির মানুষের মেইল এড্রেস কালেক্ট করতে হবে। তারপর যে পণ্যের মার্কেটিং করতে চান, সেটি নিয়ে ভালভাবে গবেষণা করার পর পন্যের চাহিদার বিষয় বিবেচনা করে বিভিন্ন মেইল এড্রেসে আপনার পণ্যের লিংক পাঠিয়ে দিতে হবে। তারপর সেই ব্যক্তি আপনার প্রোডাক্ট দেখে পছন্দ করলে প্রোডাক্ট ক্রয় করার জন্য আগ্রহ প্রাকাশ করতে পারে। মূলত এভাবে ইমেইল মার্কেটিং করা হয়ে থাকে।

৭। এফিলিয়েট মার্কেটিং

কোন কোম্পানির প্রোডাক্ট বিক্রি করে কমিশন নেওয়াকে আমরা সাধারণত এফিলিয়েট মার্কেটিং বলে থাকি। এফিলিয়েট মার্কেটিং করে আপনি আপনার কোম্পানির প্রোডাক্ট অনলাইনে বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারা বিক্রি করে নিতে পারেন। এখানে আপনি এফিলিয়েট কমিশন ভোগি হবেন না, আপনি এফিলিয়েট প্রোগ্রাম চালু করে অন্যকে কমিশন দেবেন। বর্তমানে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে ডিজিটাল মার্কেটে প্রচুর পন্য ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে।

৮। মোবাইল এপস মার্কেটিং

বর্তমান সময় টেকনোলজির যুগ হওয়ার কারনে প্রায় সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন রয়েছে। আর প্রত্যেকটি স্মার্টফোনে মানুষ বিভিন্ন ধরনের মোবাইল এপস ব্যবহার করছে। বিশেষকরে গুগল প্লে-স্টোর ও এ্যাপল এপস স্টোরে সহজে বিভিন্ন এপস পাওয়া যায় বিধায় সবাই এখন মোবাইলে তাদের পছন্দের এপস ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে। 

আর ডিজিটাল মার্কেটাররা সেই সুযোগকে ব্যবসার কাজে ব্যবহার করে তাদের পন্য প্রমোট করে নিচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের এপস তৈরি করে সেগুলোতে প্রোডাক্ট এর বিজ্ঞাপন দিয়ে সহজে পন্যের প্রচার ঘটানো যায়। তাছাড়া গুগল এডমুব এর মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করে সব ধরনের মোবাইলের এপস এর ভীতরে বিজ্ঞাপন দেওয়া যায়।

ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার

বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক ডিজিটাল মার্কেটার রয়েছে যারা ডিজিটাল মার্কেটিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রহন করে মাসে হাজার হাজার টাকা আয় করছে। আপনি যদি একজন ডিজিটাল মার্কেটার হতে চান, তাহলে উপরের যেকোন ৪/৫ টি মার্কেটিং সম্পর্কে নিজেকে ভালোভাবে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারেন। তাহলে আপনি ভবিষ্যতে একজন ভালোমানের ডিজিটাল মার্কেটার হয়ে বিভিন্ন কোম্পানির মার্কেটিং সেক্টরে একটি সম্মানজনক জব করতে পারবেন।

আপনি হয়ত জানেন না যে, বর্তমানে প্রায় সকল ধরনের বড় বড় কোম্পানি তাদের কোম্পানির জন্য অনেক টাকা ব্যয় করে ভালোমানের ডিজিটাল মার্কেটারদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। বিশেষকরে আপনি ফেসবুক মার্কেটিং, গুগল এডওয়ার্ড, ইউটিউব মার্কেটিং ও কনটেন্ট মার্কেটিং বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারলে, ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে ক্যারিয়ার গঠন করা আপনার জন্য কোন ব্যাপার হবে না।

শেষ কথা

আপনি যদি অন্যর প্রোডাক্ট এর প্রচার প্রচারনা করতে চান, তাহলে ট্রাডিশনাল মার্কেটিং তুলনায় সহজে ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনার টারগেটেড কাস্টমারদের কাছে নির্ধারিত পন্য বা সেবার প্রচার প্রচারনা করতে পারেন।

বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এর অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে এবং ভবিষ্যতে ডিজিটাল মার্কেটিং এর জনপ্রিয়তা আরো কয়েকগুন বৃদ্ধি পাবে। কজেই আপনার প্রোডাক্ট প্রমোট করার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং এর হেল্প নিতে পারেন। সেই সাথে আপনি একজন ডিজিটাল মার্কেটার হতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর নিয়মগুলো ভালোভাবে আয়ত্ম করে নিতে হবে।

Comments

Popular posts from this blog

নতুন ফুলের ছবি Download করুন

FTP Server BD 2020: Best FTP BD

Top 5 Bangla Movie Download Site