এফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয়: এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে শুরু করবো?

অনলাইনের মাধ্যমে কোন একটি পন্য ক্রেতাদের হাতে পৌছে দেওয়ার একটি ডিজিটাল ও সহজ পদ্ধতি হচ্ছে এফিলিয়েট মার্কেটিং। অনলাইন হতে টাকা আয় করার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করলে সর্বপ্রথম এফিলিয়েট মার্কেটিং এর বিষয়টি সামনে চলে আসে। এফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে আমরা মার্কেটিং বিষয়টি আপনাদের ক্লিয়ার করার চেষ্টা করব। তারপর ধারাবাহিকভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং কি, কেন, কিভাবে করতে হয় এবং কিভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং করে ঘরে বসে অনলাইন হতে টাকা ইনকাম করবেন সেই সকল বিষয়ে আমি আপনাদের পরিষ্কার ধারনা দেওয়ার সর্বোচ্ছ চেষ্টা করব।
এফিলিয়েট মার্কেটিং করে কিভাবে অনলাইন হতে টাকা আয় করবেন?




আমাদের আজকের এই পোস্টটি অর্থাৎ এফিলিয়েট মার্কেটিং বিষয়ে নিয়ে লেখা শুরু করার পূর্বে আমি প্রায় এক ঘন্টা ইন্টারনেটে বাংলা ও ইংরেজী ব্লগ/ওয়েবসাইটের এফিলিয়েট সংক্রান্ত অনেক পোস্ট পড়ে দেখেছি। আমার রিসার্চের পর দেখলাম যে, অধিকাংশ বাংলা ব্লগ বিভিন্ন ইংরেজী ব্লগ থেকে কনটেন্টগুলো সরাসরি গুগল ট্রান্সলেট টুলের মাধ্যমে অনুবাদ করে কপি পেষ্ট করে রেখে দিয়েছে। আর কয়েকটি ব্লগ এই বিষয়ে অনেকটা সুন্দরভাবে লেখেছে বা পরিষ্কার ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে সবগুলো লেখার মধ্যে লেখকগণ বার বার এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মত সহজ বিষয়টাকে জঠিলভাবে উপস্থাপন করেছেন। অনেকগুলো ব্লগ পোস্ট পড়ার পর আমার কাছে মনেহয়েছে যে, প্রত্যেক লেখক বিষয়টা সহজভাবে নেয়নি। তারা সবাই এমনভাবে লেখেছেন যেন এটা অত্যান্ত কঠিন ও জঠিল একটি বিষয়। অথচ এফিলিয়েট মার্কেটিং খুব সহজ ও নরমাল একটি বিষয়।




উপরের প্যারা পড়ে এফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয়ের বিষয়টিকে নরমালি নিবেন না। কারণ আমি এফিলিয়েট মার্কেটিং বিষয়টি খুব সহজ বলেছি কিন্তু আয় করাটা সহজ বলিনি। ইন্টারনেট কিংবা অফলাইন বা বাস্তব জীবনের কর্মক্ষেত্রের কোন জায়গা থেকেই কেউই দক্ষতা, অভীজ্ঞতা ও পরিশ্রম ছাড়া টাকা ইনকাম করতে পারে না। আর যারা কোন কাজে পরিশ্রম করে তারা সেই কাজে সফলতা অর্জন করে নেয়। এখানে এফিলিয়েট মার্কেটিং বিষয়ের ক্ষেত্রেও আপনার মেধা, দক্ষতা ও শ্রম দিয়ে টাকা উপার্জন করতে হবে। আপনাকে একটি বিষয় পরিষ্কার মনে রাখতে হবে পৃথিবীর কোন কাজে শ্রম না দিয়ে কখনো সফলতা ও টাকা উপার্জন করা যায় না। কেউ যদি আপনাকে পরিশ্রম ব্যতীত এফিলিয়েট মার্কেটিং বা অন্য কোন অনলাইন মাধ্যম হতে সহজে টাকা উপার্জনের লোভনীয় রাস্তা দেখায় তবে সেটা কখনো বিশ্বাস করবেন না।

আমি আগেই আপনাকে বলেছিলাম এফিলিয়েট মার্কেটিং কি তা বুঝার পূর্বে মার্কেটিং বিষয়টি বুঝতে হবে। কারণ মার্কেটিং এর একটি অংশ হচ্ছে এফিলিয়েট মার্কেটিং। আমি আপনাদের বিষয়টি সহজভাবে বুঝানোর জন্য প্রথমে মার্কেটিং বিষয়টি ক্লিযার করব। তারপর বিস্তারিত বিষয়ে আলোচনা করব।

মার্কেটিং কি?

প্রথমে মার্কেটিং বিষয়টিকে আপনি অনলাইনের সাথে তুলনা করবেন না। এটাকে অফলাইন ভেবে আপনি নিজেই মনে করুন আসলে মার্কেটিং কি ও কিভাবে পন্য মার্কেটিং বা বাজারজাত করা হয়? সাধারণত পন্য বিনিময় বা ক্রয় বিক্রয়কে মার্কেটিং বলে। যে সকল পন্য আপনার কাছে রয়েছে সেগুলো বিভিন্ন উপায়ে বাজারজাত করণ বা বিক্রয়ের পদ্ধতিই হচ্ছে মার্কেটিং।

এফিলিয়েট মার্কেটিং কি?

এফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে অনলাইন ভিত্তিক পন্য ক্রয় ও বিক্রয়। তবে আপনাকে এ বিষয়ের এতে গভীরে যেতে হবে না। সকলের বুঝার সুবিধার্তে সহজভাবে বলা যায় যে, অনলাইনে পন্য ক্রয় ও বিক্রয় সংক্রান্ত কোম্পানি বা প্রতিষ্টানের বিভিন্ন প্রোডাক্ট অনলাইনের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে পৌছে দিয়ে কিংবা বিক্রয় করে বিক্রয়কৃত প্রোডাক্ট হতে শতকরা হারে কমিশন লাভ করাই হচ্ছে এফিলিয়েট মার্কেটিং। অর্থাৎ কোম্পানি আপনাকে বিভিন্ন প্রোডাক্ট দেবে এবং আপনি সেই প্রোডাক্টগুলোর লিংক শেয়ারের মাধ্যমে কাস্টমারদের কাছে বিক্রয় করবেন। সবশেষে কোম্পানি আপনার বিক্রয়কৃত প্রোডাক্ট হতে মোট দামের উপর ১০% - ১৫% কমিশন আপনাকে দেবে। আসলে এটাই হচ্ছে আপনার ও আমার জন্য এফিলিয়েট মার্কেটিং।

এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, আমি কিভাবে বিভিন্ন কোম্পানির প্রোডাক্ট হাতে পাব? এখানে আপনাকে কোন প্রোডাক্ট হাতে দেওয়া হবে না। আপনি কোন একটি কোম্পানির ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করবেন। রেজিস্ট্রেশন করার পর আপনার জন্য সম্পূর্ণ ইউনিক একটি Url দেওয়া হবে। তারপর আপনি যে সকল পন্য প্রমোট করতে চান সেই সকল পন্যের মধ্যে ক্লিক করে প্রত্যেকটি পন্যের আলাদা আলাদা Url নিতে পারবেন। তারপর আপনি সেই লিংকগুলো ক্রেতাদের কাছে পৌছাতে থাকবেন। কোন ক্রেতা যখন আপনার লিংকে ক্লিক করে কোন পন্য ক্রয় করবে তখন ঐ পন্যের মূল্য হতে শতকরা হারে কমিশন দেবে। মূলত এই প্রক্রিয়াকেই এফিলিয়েট মার্কেটিং বলে।

কিভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করবেন?

আপনি হয়তো ইতোপূর্বে আপার বন্ধু বান্ধব ও ব্ভিন্ন ব্লগ পড়ে জানতে পেরেছেন এফিলিয়েট মার্কেটিং করে হাজার হাজার ডলার আয় করা যায়। আপনি একদম ঠিক শুনেছেন। আপনার দক্ষতা ও ভীজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরিশ্রম করলে আপনিও একসময় এফিলিয়েট মার্কেটিং করে অনলাইন হতে মাসে হাজার ডলার ইনকাম করতে পারবেন। কিভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করবেন সে বিষয়ে আলোচনা করা পূর্বে আমি আপনাকে আরেকটি বিষয় ক্লিয়ার করে নেব।

এফিলিয়েট মার্কেটিং মূল কাজ হচ্ছে পন্যের প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে পন্য পৌছে দেওয়া। একটি উদাহরনের মাধ্যমে আমি বিষয়টি আরো ক্লিয়ার করার চেষ্টা করছি। ধরুন আপনি বাস্তব জীবনে কোন একটি কোম্পানির সাথে চুক্তি করলেন যে, কোম্পানির নিকট হতে বিভিন্ন ধরনের একশতটি পন্য নিবেন এবং সেগুলো আপনি বিক্রয় করে দেবেন। বিনিময়ে প্রত্যেকটি পনের বিক্রয়মূল্যের উপর কোম্পানি আপনাকে ১৫% হারে কমিশন দেবে। এ ক্ষেত্রে আপনি ঐ একশতটি পন্য ক্রেতাদের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য কি কি পন্থা অবলম্বন করবেন? আপনি পন্যগুলো বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে ক্রেতাদের কাছে পৌছাবেন এবং পন্যগুলোর ভালো দিক তুলে ধরবেন। এতেকরে ক্রেতা আপনার পন্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ক্রয় করবে।

আমি আরেকটি উদাহরনের মাধ্যমে বিষয়টি আরো পরিষ্কার করছি। আপনি হয়ত গ্রাম গঞ্জের বিভিন্ন হাঠে ও বাজারে বিভিন্ন ধরনের কোম্পানির প্রোডাক্ট এর প্রচার করতে দেখেছেন। এ ক্ষেত্রে দেখা যায় একটি বাজারে কাঙ্খিত পন্যের প্রমোটকারী বিভিন্ন গান বাজনার আয়োজন করে প্রথমে লোকজ জড় করে। গান বাজনার এক পর্যায়ে লোকজন জমা হলে তাদের পন্যগুলির ভালো দিক তুলে ধরে। যার ফলে দেখা যায় খুব সহজে প্রমোটকারী অনেক পন্য বিক্রয় করতে পারে।

ঠিক একইভাবে আপনি অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়েবসাইট হতে যে প্রোডাক্ট নেবেন প্রথমে আপনাকে চিন্তা করতে হবে আপনি সেই প্রোডাক্ট কিভাবে কাষ্টমারদের হাতে পৌছাতে পারবেন। এই কাজটি আপনি বিভিন্নভাবে করতে পারেন। আপনার একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ থাকলে সেই ব্লগে ঐ প্রোডাক্টগুলোর রিভিউ তৈরি করে পন্যের লিংক শেয়ার করার মাধ্যমে ক্রেতাদের সেই পন্য ক্রয়ের জন্য কোম্পানির ওয়েবসাইটে পৌছে দিতে পারেন। তাছাড়া ফেইসবুক, টুইটার, ইউটিউব ও ইমেইল সহ বিভিন্ন সোসিয়াল মিডিয়া সাইটে লিংক শেয়ার করেও পন্য ক্রয়ের জন্য ক্রেতাদের উৎসাহিত করতে পারেন। তবে আপনারা যেই পদ্ধতিতে অবলম্বন করেন না কেন প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে আপনার প্রচুর পরিমানে জনপ্রিয়তা থাকতে হবে। প্রথম দিকে জনপ্রিয়তা না থাকলেও কাজের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করে নিতে হবে।

এফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য ভালো প্লাটফর্ম কোনটি?

এফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য লক্ষ লক্ষ কোম্পানি রয়েছে। তন্মধ্যে কিছু ভালোমানের কোম্পানি রয়েছে যেগুলোর প্রচুর পরিমানে প্রোডাক্ট রয়েছে এবং তারা ভালোমানের হারে মার্কেটারদের কমিশন পরিশোধ করে। নিচে কয়েকটি ভালোমানের এফিলিয়েট কোম্পানির নাম তুলে ধরছি যেগুলোতে কাজ করে দীর্ঘদিন টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
  • ShareASale Affiliates.
  • Amazon Associates. (সবচাইতে বেশী পরিচিত)
  • eBay Partners.
  • Shopify Affiliate Program.
  • Clickbank.
  • Rakuten Marketing Affiliates.
  • Leadpages Partner Program.
  • StudioPress Affiliate Website.

কিভাবে বেশী আয় করা যাবে?

প্রথমেই বলে রাখছি আয় করার জন্য আপনাকে অবশ্যই ধৈর্য্য ধারন করে দীর্ঘ দিন পরিশ্রম করতে হবে। তাহলে ধীরে ধীরে সফলতা আপনার হাতে ধরা দেবে। তবে এফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় বড়ানোর জন্য অবশ্য কিছু টেকনিক অবলম্বন করতে হয়। সাধারণত অনলাইন হতে মানুষ যে সকল পন্য বেশী কিনে থাকে সেগুলো নিয়ে কাজ করলে সহজে আয় বৃদ্ধি করা যায়। আপনি যদি এমন জিনিস পছন্দ করেন যেগুলোর অফলাইনে চাহিদা রয়েছে কিন্তু অনলাইনে চাহিদা খুব কম তাহলে আপনি এফিলিয়েট মার্কেটিং করে সফল বা লাভবান হতে পারবেন না। এ জন্য যে সকল পন্যের অনলাইনে প্রচুর পরিমানে চাহিদা রয়েছে সেই সকল পন্যের রিভিউ করে লিংক শেয়ার করলে সহজে  বেশী টাকা ইনকাম করা যাবে।

তবে আরেকটি বিষয় ক্লিয়ার করে নিচ্ছি যে, আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটর এর কনটেন্ট ইংরেজী হলে আয় বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। কারণ বাংলাদেশের মানুষ এখানো পর্যন্ত অনলাইন হতে তেমন কোন প্রোডাক্ট কেনাকাঠা করে না। কাজেই আপনি বাংলা ভাষায় ব্লগিং করে এফিলিয়েট মার্কেটিং করলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এ ক্ষেত্রে ইংরেজী ভাষায় আর্টিকেল শেয়ার করে চাহিদা সম্পন্ন প্রোডাক্ট নিয়ে এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারলে খুব অল্প দিনে বেশী টাকা আয় করতে পারবেন।

এফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে আমাদের পরামর্শঃ

কাজ শুরু করার আগে আপনার একটি নিজেস্ব ব্লগ কিংবা ওয়েবসাইট তৈরি করে নিবেন। আপনি যদি ফ্রিতে ব্লগ তৈরি করতে চান তাহলে অবশ্যই গুগল ব্লগার দিয়ে একটি ব্লগ তৈরি করে নিতে পারেন। তবে ব্লগ ডিজাইন ও সাজানো শেষ হওয়ার পর একটি টপ লেভেলের ডট কম কিংবা ডট নেট ডোমেইন সেট করে নিবেন। তারপর আপনি যে প্রোডাক্ট সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন সেই প্রোডাক্ট এর রিভিউ তৈরি করতে থাকবেন। ব্লগের যখন ১৫/২০ টি পোষ্ট হয়ে যাবে তখন ব্লগের এসইও সংক্রান্ত কাজ শুরু করবেন। কারণ এসইও ছাড়া কোনভাবে ব্লগের প্রচুর পরিমানে ট্রাফিক পাওয়া সম্ভব হবে না। আর আপনার পন্য ক্রেতাদের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য ব্লগে অবশ্যই ভিজিটর প্রয়োজন হবে। আপনার ব্লগে যত বেশী ভিজিটর আসবে আপনার পন্য তত বেশী বিক্রয় হবে।

তাছাড়াও আপনি যদি ফেইসবুক পেজ, ফেইসবুক গ্রুপ, ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ, টুইটার, ইউটিউব চ্যানেল, ওয়াটসআপ চ্যাট ম্যাসেঞ্জার সহ আরো অন্যান্য সোসিয়াল মিডিয়াতে প্রচুর পরিমানে জনপ্রিয়তা সম্পন্ন হন তাহলে সেগুলোতেও আপনার ব্লগের লিংক ও সরাসরি পন্যের লিংক শেয়ার করেও পন্য প্রমোট করে এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন। তবে যেটাই করেন না কেন আপনাকে পরিশ্রমের মাধ্যমে কাজ করে সফলতা ও ইনকাম বৃদ্ধি করতে হবে। তা না হলে পরিশ্রম ব্যতীত কোনভাবে ইনকাম করা সম্ভব হবে না।

Comments

Popular posts from this blog

নতুন ফুলের ছবি Download করুন

FTP Server BD 2020: Best FTP BD

Top 5 Bangla Movie Download Site